এক জঙ্গলে বাস করত এক কাক আর এক হরিণ। কাক থাকত চাঁপাগাছের ডালে বাসা বেঁধে। আর হরিণ থাকত সেই চাঁপাগাছের নীচে। কাক আর হরিণের মধ্যে অনেকদিনের ভাব। কাক সকালবেলা উড়ে গিয়ে খাবার খুঁজতে যেত। আর হরিণ বনের মধ্যে ইচ্ছেমতো ঘুরে ফিরে বনের ঘাসপাতা খেত। ঘাসপাতা খেয়ে খেয়ে হরিণের চেহারা বেশ নাদুসনুদুস হয়ে উঠেছিল।
একদিন হরিণটা এক শেয়ালের চোখে পড়ল। হরিণকে দেখে শেয়ালের খুব লোভ হল। ভাবল, এর নরম মাংস খেতেই হবে। কিন্তু খাব কেমন করে? সে বুদ্ধি আঁটল আগে হরিণের সঙ্গে ভাব জমিয়ে নিই। তাতে তার কাছাকাছি থাকা যাবে।
এই ভেবে সে হরিণের কাছে গিয়ে বলল, 'কী গো বন্ধু কেমন আছ?' হরিণ বলল, 'কে তুমি, ভাই? তোমায় তো চিনতে পারলাম না।' শেয়াল বলল, 'আমি এক শেয়াল। এই বনেই থাকি, কিন্তু আমার কোনো বন্ধু নেই। বন্ধু ছাড়া কি বাঁচা যায় বলো, তাই তোমায় দেখে ভাবলাম তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাই। কি, আপত্তি নেই তো? এখন থেকে তুমি আর আমি একসঙ্গে চলাফেরা করব।'
হরিণ বলল, 'বেশ, তাই হবে।' তারপর সন্ধ্যাবেলায় হরিণ আর শেয়াল কাকের সঙ্গে দেখা করতে গেল। কাক হরিণকে বলল, 'তোমার সঙ্গে ও কে এসেছে?' হরিণ বলল, 'ও এক শেয়াল, আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়েছে।' কাক বলল, 'অচেনা কারও সঙ্গে চট করে বন্ধুত্ব করতে নেই।'
কাকের কথায় শেয়াল খুব রেগে গেল। কিন্তু রাগ চেপে মিষ্টি গলায় কাককে বলল, 'ছি ভাই, এটা তুমি কি ঠিক কথা বললে? হরিণ যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিল সেদিন তুমিও তো তার অচেনা ছিলে। এখন তো দেখছি তোমাদের দুজনের মধ্যে খুব গলাগলি ভাব। তাহলে আমি কি দোষ করলাম, বলো!'
হরিণ বলল, 'ঠিক আছে, ঠিক আছে। এত কথা-কাটাকাটির কী দরকার? আমরা তিনজনেই তিনজনের বন্ধু। কেউ কারও শত্রু নয়।' কাক বলল, 'ঠিক আছে। তবে তাই হোক।'
এরপর শেয়াল একদিন হরিণকে ডেকে বলল, 'বন্ধু, এই বনের মধ্যে একটা জায়গা দেখেছি, সেখানে খেতভরা ফসল। চলো, তোমাকে জায়গাটা দেখিয়ে দিচ্ছি।'
শেয়াল হরিণকে জায়গাটা দেখিয়ে দিল। হরিণ রোজ সেই চাষের জমিতে গিয়ে ফসল খেতে লাগল। ব্যাপারটা একদিন খেতের মালিকের নজরে পড়ল। হরিণকে ধরার জন্য সে ফাঁদ পাতল। হরিণ সেই ফাঁদে পড়ল। হরিণ ভাবল, বন্ধু তাকে এই বিপদ থেকে বাঁচাবে। অন্যদিকে শেয়াল ভাবল, যাক্। এতদিন পর আমার মনের ইচ্ছা পূর্ণ হবে। মালিক যখন হরিণটাকে কাটবে, তখন তার রক্তমাংস-মাখা হাড়গোড় আমি নিশ্চয়ই পাব। হরিণ শেয়ালকে ডেকে বলল, 'বন্ধু, আমাকে শিগগির বাঁচাও। আমার বাঁধনগুলো কেটে দাও।' শেয়াল বলল, 'হায় হায় বন্ধু, জালের বাঁধনগুলো তো পশুর নাড়িভুঁড়ি দিয়ে তৈরি। আজ রবিবার। রবিবারে তো আমি দাঁতে মাংস কাটি না। কাল সকালে কেটে দেব, কেমন? তুমি কোনো চিন্তা কোরো না।' এই বলে সে কাছাকাছি গিয়ে লুকিয়ে রইল।
এদিকে সন্ধ্যা হয়ে গেল। হরিণ তখনও বাসায় ফেরেনি। কাঁক তাকে খুঁজতে বেরোল। খুঁজতে খুজতে হরিণকে দেখতে পেয়ে বলল, 'সেই ঠগ শেয়ালটা কোথায় গেল?' হরিণ বলল, 'এতক্ষণে বুঝেছি, আমার মাংস খাবে বলে আশেপাশেই কোথাও লুকিয়ে আছে।' কাক বলল, 'আমি তো আগেই বলেছিলাম। যে আড়ালে ক্ষতি করে, কিন্তু সামনে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে তাকে একেবারেই আমল দেবে না।'
এদিকে সকাল হতেই খেতের মালিক লাঠি নিয়ে হরিণকে মারতে এল। কাক হরিণকে বলল, 'তুমি পেট ফুলিয়ে পাগুলো টান করে মড়ার মতো শুয়ে থাকো। আমি যেই কা-কা করব অমনি তুমি ছুটে পালাবে।' খেতের মালিক হরিণকে দেখে বলল, 'এ যে দেখছি নিজেই মরে পড়ে আছে।'—এই বলে সে হরিণের বাঁধনগুলো খুলে দিল। সুযোগ বুঝে কাক এবার ডাকতে লাগল। কাকের ডাক শুনে হরিণ লাফিয়ে উঠে ছুটে পালাল। তাকে মারবার জন্য খেতের মালিক খুব জোরে লাঠি ছুড়ে দিল। লাঠিটা গিয়ে লাগল শেয়ালের গায়ে। লাঠির ঘায়ে শেয়ালের প্রাণ বেরিয়ে গেল।
একেই বলে, লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।
হরিণ, কাক আর ঠগ শেয়ালের গল্প 🦌🦅🦊 | বাংলা নীতিকথা | Bengali Moral Story for Kids
📄 Description (ভিডিওর বিবরণ):
জঙ্গলে বাস করত এক কাক আর এক হরিণ, তাদের মধ্যে ছিল গাঢ় বন্ধুত্ব। কিন্তু এক শেয়াল তাদের বন্ধুত্বে ফাঁস লাগাতে চাইল লোভের বশে। কীভাবে কাক তার বুদ্ধি ও সতর্কতায় হরিণকে বাঁচালো আর শেয়াল পেল তার কর্মফল — এই চমৎকার শিক্ষামূলক গল্পটি শুনুন আজকের ভিডিওতে।
📚 নীতিশিক্ষা: লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।
🎧 বাচ্চাদের জন্য উপযুক্ত মনোরঞ্জন ও শিক্ষা একসাথে!
👉 সাবস্ক্রাইব করুন এমন আরও গল্প পেতে!
🔑 Keywords:
🏷️ Hashtags:
#BanglaGolpo
#BengaliMoralStory
#KidsStoryBangla
#AnimalStory
#শিশুদেরগল্প
#BanglaStoryForKids
#পঞ্চতন্ত্রগল্প
🎞️ Video Intro Script (5–7 সেকেন্ড):
🎶 [Background forest sounds with gentle music]
📜 “বন্ধুতা, বিশ্বাস আর লোভের এক বিচিত্র কাহিনী…”
🎙️ দেখুন ‘হরিণ, কাক আর ঠগ শেয়ালের গল্প’ — একটি শিক্ষামূলক বাংলা গল্প শিশুদের জন্য!”
No comments: