ছেঁড়া চপ্পল
প্রতিবার যখনই মুচির দোকানে তেমন কোনো কাজ থাকত না, তখনই সেই শেঠটার চাকর এসে তার ছিঁড়া চপ্পলটা সেলাই করার জন্য দিয়ে যেত। মুচি খুব মন দিয়ে সেই চপ্পলটা এমনভাবে সেলাই করত, যেন অন্তত দু-তিন মাস আর না ছেঁড়ে।
চাকর এসে কোনো দামাদামি না করেই টাকা দিয়ে চপ্পলটা নিয়ে যেত। কিন্তু কদিন পরেই আবার সেই একই চপ্পল ছেঁড়া অবস্থায় মুচির দোকানে হাজির হত।
আজও ঠিক সেই রকমই সকাল, সূর্য উঠেছে... শেঠটার চাকর রামধন দোকানে ঝাঁট দিচ্ছে।
আর সেই শেঠটা... সে তখন জোর দিয়ে তার চপ্পল ছেঁড়ার চেষ্টা করছে। অনেক চেষ্টা করেও যখন চপ্পলটা ছিঁড়ল না, তখন সে রামধনকে ডাক দিল–
"এই রামধন! এর কিছু কর তো! মঙ্গু এমন কী সেলাই করে যে চপ্পলটা ছেঁড়েই না!"
রামধন আজ আর চুপ থাকতে চাইল না, সে স্পষ্ট বলে ফেলল, "শেঠজি, আমি আপনার এই কাণ্ড বুঝি না! আপনি নিজেই চপ্পল ছেঁড়েন, আবার নিজেই মঙ্গুর কাছে পাঠান সেলাই করাতে!"
শেঠজি তখন হেসে ফেলল। এইবার চপ্পলটা একেবারে ছিঁড়ে গেছে। সে সেটা রামধনের হাতে তুলে দিয়ে আসল কারণটা বলল–
"দেখ রামধন, যেদিন দেখি মঙ্গুর দোকানে কোনো কাজ নেই, সেদিনই আমি আমার চপ্পলটা ছিঁড়ে ফেলি। কারণ আমি জানি, মঙ্গু খুব গরিব হলেও, সে নিজের সম্মানকে খুব ভালোবাসে। আমি যদি সরাসরি তাকে সাহায্য করতে যাই, তাহলে সে নেবে না। তাই আমি এই নাটক করি—আমার চপ্পল ছিঁড়ি, যাতে তার দোকানে একটা কাজ আসে। আমার এই অভিনয়ে যদি ওর আত্মসম্মান বাঁচে, আর আমি একটু সাহায্য করতে পারি, তাহলে এর থেকে ভালো আর কিছু হতে পারে?"
রামধনের চোখে জল চলে এলো... সেইদিন সে বুঝেছিল, দান কেবল টাকা দিয়ে হয় না, ভালোবাসা দিয়েও হয়।
এই গল্পটি নিছক ছেঁড়া চপ্পলের গল্প নয়, এটি মানুষের সহানুভূতি, সম্মানবোধ এবং গোপন উদারতার এক অমূল্য দৃষ্টান্ত।
No comments: